ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ছয়ের বর্তমান প্রকল্প অনুযায়ী এর রেল লাইন উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। এটিকে বাড়িয়ে এখন মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত নিতে চায় সরকার ।
এ জন্য বাড়তি ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। খরচ হবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে চায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের জন্য বাড়তি সোয়া কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা খরচ পড়বে। বাকি টাকা খরচ হবে অবকাঠামো নির্মাণে। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।এ প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। এক দশক পর এসে রেললাইনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোসহ নতুন কিছু কাজ যোগ করতে চায় ডিএমটিসিএল। এ ছাড়া বাড়তি আয়ের জন্য নতুন করে তিনটি স্টেশন প্লাজা ও ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) করতে চায় সংস্থাটি। যাত্রীদের টিকিটের মূল্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিপণিবিতান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ডিএমটিসিএলের প্রস্তাব পাস হলে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার।
ব্যায় বৃদ্ধি পাবে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা
বাড়তি কাজ যুক্ত করায় প্রকল্পের ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। অর্থাৎ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক ব্যয় মেটাতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাকি ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার জোগান দেবে সরকার।
প্রকল্পটিতে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বাড়তি ব্যয়ের মধ্যে তিনটি স্টেশন প্লাজার জন্য সোয়া ছয় হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা ও তিনটি স্টেশন প্লাজা নির্মাণে ৯৩ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) নির্মাণে খরচ হবে ৮৬৬ কোটি টাকা। বাকি ৭ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রেললাইন নির্মাণের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাবদ ৩৪৬ কোটি টাকা এবং বৈদ্যুতিক ও মেকানিক্যাল ব্যবস্থা (ইঅ্যান্ডএম) স্থাপনে ৩২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের বক্তব্য
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা থাকলে জমি অধিগ্রহণে বাড়তি এ টাকা খরচ করতে হতো না। কোন মৌজায়, কোন দাগে জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তার কিছুই জানায়নি তারা। কিসের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণ বাবদ এক হাজার কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ডিএমটিসিএল এর কাছে।