আমরা দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচয় পাচ্ছি। কিন্তু ইউক্রেনীয়রা একই কাজ করে বীরত্বের জন্য প্রশংসিত হচ্ছে।
- মোহাম্মদ রফিক
মূল প্রবন্ধ
What the war in Ukraine taught us, Palestinians
আলজাজিরায় প্রকাশিত
অনুদিত সার সংক্ষেপ
২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেছিল, তখন বিশ্ববাসী ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতা দেখে বিস্মিত হয়েছে।
প্রথম রুশ সৈন্য ইউক্রেনে পা রাখার সাথে সাথেই, হাজার হাজার বেসামরিক লোক অস্ত্র হাতে নিয়ে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সাথে যোগ দিয়েছিল তাদের মাতৃভূমিকে আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করতে। ইউক্রেনের শহরগুলিতে বৃষ্টির মত রুশ গোলা বর্ষণ করে সামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক এলাকাগুলি ধ্বংস করে দিলেও বেসামরিক ব্যক্তিরা তাদের ইউক্রেনীয় সেনাদের সমর্থন করে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা শেষ অবধি তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।
মর্যাদা ও বীরত্বের এই প্রদর্শনীতে সারা বিশ্বের রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিকরা রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে এবং ইউক্রেনের "প্রতিরোধ শক্তির" পিছনে তাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাতে একে অপরের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়েন।
একজন রাজনীতিবিদ যিনি ইউক্রেন এবং এর জনগণের প্রতি সমর্থন জানাতে ছুটে এসেছিলেন তিনি ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিড। একটি সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি "ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে "আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার গুরুতর লঙ্ঘন" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি বলেন, "ইসরায়েল এই হামলার নিন্দা করে এবং ইউক্রেনের নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত," তিনি এও বলেন, "ইসরায়েল এমন একটি দেশ যেটি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং যুদ্ধ বিরোধ সমাধানের উপায় নয়।"
দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ "সন্ত্রাস" নয় বরং একটি অধিকার
ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও নির্যাতন নিপিড়নে রেখে ইউক্রেনের জনগণের প্রতি ল্যাপিডের প্রতিরক্ষা এবং মানবিক সমর্থন মানবাধিকারের প্রতি চপেড়াঘাত। এটি ছিল ভণ্ডামির প্রকাশ্য প্রদর্শন। শুধু ল্যাপিড নয়
হাজার হাজার ইসরায়েলিও "ইউক্রেনের পক্ষে" তেল আবিবের রাস্তায় নেমেছে। তারা ইউক্রেনের পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করে এবং “মুক্ত ইউক্রেন” স্লোগান দেয়, তখন শহরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা নির্বাক হয়ে দেখে। সর্বোপরি, কোন ইসরায়েলি ইসরায়েলের রাস্তায় "মুক্ত প্যালেস্টাইন" বা তাদের রাষ্ট্রের বর্ণবাদী শাসনের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য সমান অধিকারের দাবিতে কখনও নামেনি। তারা নিঃসন্দেহে এটাও জানে যে, যখনই ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের রাস্তায় "মুক্ত প্যালেস্টাইন" শ্লোগান দেয় এবং তাদের নিজস্ব পতাকা তোলার চেষ্টা করে, তখনই তারা গ্রেপ্তার, পুলিশি বর্বরতা বা আরও খারাপ কিছুর মুখোমুখি হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিনি জনগণ যে ধাক্কা খেয়েছে তা কেবল ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং ইসরাইলীদের ভণ্ডামিমূলক কাজ এবং কথার কারণে ঘটেনি। ২৪ ফেব্রুয়ারী থেকে, তারা ব্যাপকভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভন্ডামীর মুখোশও দেখেছে।
রাশিয়ানরা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করার পরে, তারা দাবি করে যে ইউক্রেন কখনই একটি দেশ ছিল না এবং ইউক্রেনের ভূমি সর্বদা রাশিয়ার ছিল। সমস্ত পশ্চিমা নেতা, মিডিয়া সংস্থা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি "দখলকৃত জনগণের সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার" সম্পর্কে আবেগের সাথে কথা বলতে শুরু করে। ইউক্রেনের "সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বায়ত্তশাসনের উপর তারা গুরুত্ব দেয়।" কিন্তু এই তারাই ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরক্ষা এবং স্বাধীনতার জন্য তাদের কয়েক দশক ধরে চলা সংগ্রামকে কোন গুরুত্ব দেয়নি।
এই গত সপ্তাহে, আমরা ফিলিস্তিনিরা বারবার হতবাক হয়েছি, বুঝতে পেরেছি যে বিশ্ব সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে আমাদেরকে জ্বালিয়েছে।
আমরা শিখেছি যে, আমাদের মাতৃভূমিতে আমরা নিপিড়ীত হওয়া সত্ত্বেও এখানে আন্তর্জাতিক আইন বিদ্যমান নেই বা কোন কাজ করছেনা। যে আইনে বলা হয়েছে, কোনো রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে আগ্রাসন চালালে আন্তর্জাতিক মহলের সেখানে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে। আমরা শিখেছি যে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য একটি দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বেআইনী পদক্ষেপ নয়। এছাড়া আমরা বিশ্বের বিভিন্ন সরকার, রাজনীতিবিদ, পন্ডিত, বিশ্লেষক এবং এমনকি আমাদের নিপীড়ক দখলদার ইসরাইলীদের কাছ থেকেও শিখেছি যে, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ "সন্ত্রাস" নয় বরং একটি অধিকার।
BBCN থেকে আরো পড়ুনঃ
- পরমাণু হামলার ইঙ্গিত পুতিনের; ৩০ মিনিটে হতে পারে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যু
- দুই লাখের বেশি ইউক্রেনীয়ানকে ইউকেতে আসার সুযোগ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার
- আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় নিষিদ্ধ রাশিয়া; খেলতে পারবেনা বিশ্বকাপ, ইউরোপা লীগ, চ্যাম্পিয়নস লীগ
- ছাত্রাবস্থায়ই মারপিট করতেন পুতিন; বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন নিজের গ্যাং