মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে র্যাবের (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন)।
Bangladesh RAB |
আগেই খোলা আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে কেনা যন্ত্রপাতি তৈরি থাকলেও তা শিপমেন্ট হচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞার কারনে নতুন করে এলসিও খোলা যাচ্ছেনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগে খোলা ৯টি এলসি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে র্যাব। এর মধ্যে দুটি এলসির বিপরীতে সাইপ্রাস থেকে ২১ কোটি টাকার 'নজরদারি যন্ত্রপাতি' প্রস্তুত রয়েছে, কিন্তু আনা যাচ্ছেনা। অন্য দুটি এলসির বিপরীতে ৩২ কোটি টাকার একই যন্ত্রপাতি দেশে এলেও বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আরও পাঁচটি এলসি নিয়ে প্রায় একই রকম সমস্যায় পড়েছে সংস্থাটি।
কি ধরনের পন্য আমদানি করছে র্যাব
যে ৯টি এলসির দায় পরিশোধে সমস্যা হয়েছে, তার মধ্যে চারটির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এ তালিকায় রয়েছে- মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যানালাইজার, ব্যাকপ্যাক আইএমএসআই ক্যাচার, জিএসএম ইউএমটিএস ভেহিকুলার সাপোর্ট সিস্টেম এবং ব্রেইন ফিঙ্গারপ্রিন্ট। সাধারণভাবে মোবাইল ফোনে নজরদারি, ব্যক্তির অবস্থান শনাক্তের কাজে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে প্রথম তিনটি পণ্যের উৎপাদনকারী দেশ সাইপ্রাস। তবে পণ্য আসার কথা সিঙ্গাপুর থেকে। শেষ পণ্যটির জন্য এলসি খোলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের সরবরাহকারীর অনুকূলে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি, চীনের দুটি এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি এলসির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অর্থ পরিশোধে বাধা কোথায়
রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ও জনতা ব্যাংকে এলসি খোলা হয়েছিল। সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, র্যাবের পণ্য আমদানির এলসির বিল পরিশোধ করতে না পারার বিষয়টি তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন। তবে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো উপায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের জানায়নি। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অর্থ পরিশোধ করলে সেই ব্যাংকও কালো তালিকায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
ওই কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশই নিষ্পত্তি হয় ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব লেনদেন করা হয়। যে কারণে র্যাবের পরিশোধের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক দুই কর্মকর্তারা বলেছেন, আমাদের দেশের ব্যাংকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পরিপালনের আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এখানকার ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। আবার 'ইউএস প্যাট্রিয়েট অ্যাক্ট'র আওতায় দেশটির নিষেধাজ্ঞায় থাকা সত্তার অনুকূলে লেনদেন করলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি বিভাগ ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়।
ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কর্মকর্তারা হলেন- র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আলাদা এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাে র মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দু'জনের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থার কথা জানানো হয়। বিষয়টি সুরাহার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে 'নেলসন মুলিন্স' নামের একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে সরকার। প্রতি মাসে ২০ হাজার ডলারে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করা হয়েছে বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
র্যাবের বক্তব্য
আমদানি দায় পরিশোধ করতে না পারার বিষয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব খুব বেশি জিনিস আমদানি করে, তেমন নয়। র্যাবের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ জিনিস আসে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে। শুধু গোয়েন্দা সরঞ্জাম আলাদাভাবে কেনা হয়।
তিনি বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার ধারাবাহিকতায় এবারও দেশটির কিছু দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এটা করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞার আগে। নিষেধাজ্ঞার পর এখন যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক দরপত্রের বিপরীতে সরাসরি পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। তবে এমন না যে, জিনিস আসেনি বা আর আসবে না। বরং পরিশোধ পদ্ধতি কী হবে, কীভাবে পরিশোধ করা হবে- এসব নিয়ে আমাদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের আলোচনা চলছে।
সাইপ্রাসে উৎপাদিত সরঞ্জাম সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি এবং যুক্তরাজ্য থেকে আমদানির দায় পরিশোধে সমস্যার বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, মূল সমস্যা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পণ্যের পরিশোধের ক্ষেত্রে। যেহেতু আমাদের পণ্য কেনা হয় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে। দেখা গেল নিলামে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। কিংবা পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক। তবে সরাসরি তারা অংশ না নিয়ে হয়তো অন্য দেশে নিবন্ধিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ক্রয়াদেশ পেয়েছে।
- পরমাণু হামলার ইঙ্গিত পুতিনের; ৩০ মিনিটে হতে পারে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যু
- দুই লাখের বেশি ইউক্রেনীয়ানকে ইউকেতে আসার সুযোগ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার
- আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় নিষিদ্ধ রাশিয়া; খেলতে পারবেনা বিশ্বকাপ, ইউরোপা লীগ, চ্যাম্পিয়নস লীগ
- ছাত্রাবস্থায়ই মারপিট করতেন পুতিন; বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন নিজের গ্যাং