বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ এবং ইনশা আল্লাহর পার্থক্য জানেননা। তাই কখন আলহামদুলিল্লাহ আর কখন ইনশা আল্লাহ বলতে হবে তা বুঝেননা।
অনেক মানুষ আছেন কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলেও বলেন ইনশা আল্লাহ ভালো আছি। এটা ভুল। আসুন আলহামদুলিল্লাহ এবং ইনশা আল্লাহর পার্থক্য জেনে নিই। তাহলে কখন কোনটা প্রয়োগ হবে তা সহজেই বুঝা যাবে। দুটি শব্দের আলাদা আলাদা অর্থ জানা থাকলে বিষয়টি বুঝতে অনেক সহজ হবে।
আলহামদুলিল্লাহর অর্থ
পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরাহ ফাতেহার প্রথম আয়াত "আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ" যার অর্থ সমস্ ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা। এই আয়াতের প্রথম শব্দ আলহামদুলিল্লাহ ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ, যার অর্থ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। আল্লাহকে ধন্যবাদ হিসেবে আলহামদুলিল্লাহ বলা হয়। এই শব্দগুচ্ছকে বলা হয় তাহমিদ تَحْمِيد “প্রশংসা বা হামদালাহ حَمْدَلَة।
আলহামদুলিল্লাহ কখন বলতে হবে
যখন আমাদেরকে কেউ জিজ্ঞেস করে আপনি কেমন আছেন? এর সাধারণ উত্তর হলো -আমি ভালো আছি। কিন্তু মুসলমানদের জন্য উত্তরটি একেবারেই আলাদা। কারণ আমি ভালো আছি, মানে মহান আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন। তাই আমার উত্তর হতে হবে আল্লাহর প্রশংসার সাথে। বাংলায় উত্তর হবে - আল্লাহর রহমতে ভালো আছি, আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তিনি ভালো রেখেছেন বা আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি ভালো রেখেছেন। তবে এত বড় করে না বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বা শুধুমাত্র "আলহামদুলিল্লাহ" বললেই বুঝা যাবে আমি ভালো আছি। অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে যেমন রেখেছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট।
ভালো থাকলে আলহামদুলিল্লাহ বললেই চলবে। কিন্তু আমরাতো সবসময় ভালো থাকিনা। অসুখ বিসুখের কারণে শরীর খারাপ হতে পারে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে মন খারাপ থাকতে পারে। তখন কি বলবো, না ভাই আমি ভালো নেই! অথবা এমন কি বলবো, আল্লাহ আমাকে ভালো রাখেননি! না এমনটি বলা যাবেনা। ইসলামের শিক্ষা হল সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে বা সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। সুতরাং শরীর মন যেমনই থাকুকনা কেন, কেমন আছেন এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হবে "আলহামদুলিল্লাহ"।
এছাড়া কোন কিছু খাওয়ার পর, কোন খাবার অথবা কোন পণ্য বা সম্পদ হাতে পাওয়ার পর, কোন সুসংবাদ পাওয়ার পর আল্লাহর শুকরিয়া হিসাবে "আলহামদুলিল্লাহ" বলতে হবে।
ইনশা আল্লাহ অর্থ কি এবং কখন বলতে হবে
ইনশা আল্লাহ (إِنْ شَاءَ ٱللَّٰهُ) শব্দের অর্থ আল্লাহ যদি চান, আল্লাহর যদি ইচ্ছা হয় অথবা আল্লাহর যদি হুকুম হয়।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব, যা আল্লাহ কুরআনে শিখিয়েছেন।
একবার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসহাবে কাহাফ ও যুল কারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তখন নবীজী বললেন; আগামীকাল বলব (কিন্তু ইনশা আল্লাহ বলেননি) ফলে পনের দিন ওহী আসা বন্ধ থাকল। তারপর ওহী এলো এবং সুরাহ কাহফের এই আয়াত দুটি অবতীর্ণ হল।
(
)
২৩. ওয়ালা-তাকূলান্না লিশাইয়িন ইন্নী ফা-‘ইলুন যা-লিকা গাদা-।
২৪. ইল্লাআইঁ ইয়াশাআল্লা-হু ওয়াযকুর রাব্বাকা ইযা-নাছীতা ওয়াকুল ‘আছাআইঁ ইয়াহদিয়ানি রাববী লিআকরাবা মিন হা-যা-রাশাদা-।
আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্বোধন করে বলেছেন
(হে নবী) কোনো কাজ সম্পর্কে কখনও বলো না ‘‘আমি এ কাজ আগামীকাল করব। তবে বল ‘‘ইনশাআল্লাহ’’ (আল্লাহ যদি চান তবে করব)
এছাড়া সূরাহ সূরা তাকভীরে আল্লাহ বলেছেন -
‘‘তোমরা ইচ্ছা করবে না (তোমাদের ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নিবে না) যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।’’
সুতরাং ভবিষ্যতে কোন কিছু করা হবে এমন কিছু বলার ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা বা ইনশা আল্লাহ আগে বলতে হবে। যেমনঃ ইনশা আল্লাহ করবো, ইনশা আল্লাহ যাবো, ইনশা আল্লাহ হবে ইত্যাদি।
কিন্তু ইনশা আল্লাহ করেছি, ইনশা আল্লাহ গিয়েছি, ইনশা আল্লাহ খেয়েছি এইরূপ বলা যাবেনা। অর্থাৎ অতিতে হয়ে গিয়েছে এমন কোন কাজের আগে ইনশা আল্লাহ বলা যাবেনা।
আল্লাহর ইচ্ছায় অতিতে যা কিছু হয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট "আলহামদুলিল্লাহ"। আর সামনে যা করার আশা করছি তা আল্লাহ চাইলে হবে "ইনশা আল্লাহ"।